করোনাভাইরাসের প্রকোপে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইতালির।
সেখানে এপর্যন্ত মৃত সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কোনও দেশের নিরিখে করোনায় মৃত্যুতে এখন সব চেয়ে এগিয়ে ইতালিই। এখানে ৬১ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইতালিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ডক্টর্স। এঁদের মধ্যে ৪০ জন কাজ করছিলেন লম্বার্ডিতে। আক্রান্ত ৮ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। মোট আক্রান্ত এখন এক লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে (৩১ মার্চ পর্যন্ত)।
সেই ইতালিরই এক হাসপাতালে কম্পিউটার কি-বোর্ডের উপর ক্লান্ত হয়ে ঢুলে পড়া এক নার্সের ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তাতেই প্রমাণিত কীভাবে ঘুম, ছুটি, বাদ দিয়ে অহর্নিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন দেশের সব চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। এলেনা প্যালিয়ারিনি নামে ওই নার্স কোভিড–১৯–এ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লম্বার্ডি অঞ্চলের একটি হাসপাতালে কর্মরত। প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ঢুলে পড়া ছবি দেখে, কর্মক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত হয়েছিলেন এলেনা। কিন্তু ক্লান্ত এলেনার ছবি দেখে ইতালির স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সবার উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা অনুমান করতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববাসী। তাতেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে এলেনার।
তিনি পরে বলেন, ‘আমি টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারি। কিন্তু এখন এমন একটা শত্রুর সঙ্গে লড়ছি আমি, যার সম্পর্কে কিছুই জানি না। সেটাই ভয়ের।’
লম্বার্ডির বেরগ্যামো শহরের এক চিকিৎসকও তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন যে তিনি প্রায় দুসপ্তাহ নিজের ছেলে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি। কর্মক্ষেত্রেই রয়েছেন। তাঁদের শুধু ছবি দেখছেন এবং মাঝেমধ্যে ভিডিও কলিং করছেন। ওই চিকিৎসকের পোস্টও ভাইরাল হয়েছে।
টাসকানির এক হাসপাতালের নার্স তাঁর একটি সেলফি পোস্ট করেছেন, যেখানে তাঁর সারা মুখে মাস্ক বেঁধে রাখার দাগ দেখা যাচ্ছে। ছবি পোস্ট করে ওই নার্স লিখেছেন, ২৪ ঘণ্টাই মুখে মাস্ক বেঁধে রয়েছেন তিনি কারণ তাঁর আশঙ্কা যদি কখনও নোংরা হাতে মুখে হাত দিয়ে ফেলেন অসাবধানতা বশত, তাহলে তিনিও সংক্রমিত হতে পারেন।
তুরিন শহরের একটা হাসপাতালে তাদের সব কর্মীদের মানসিক চাপ কমাতে মনোবিদদের সাহায্য নিয়েছে। সাধারণত, ইতালির অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে পরিচিত লম্বার্ডি বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলা অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম। সেখানেই স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের এই দশায় চিন্তিত বহু মানুষই।