বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ৫২টি ডিম দিয়েছে কুমির ‘জুলিয়েট।
শুক্রবার (২৯ মে) সকালে প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে নিজ বাসায় এ ডিম দেয় জুলিয়েট।
৫২টি ডিমের মধ্যে জুলিয়েটের নিজের বাসায় ১৪টি, পুরোতন ইনকিউবেটরে ২৬টি ও নতুন ইনকিউবেটরে ১২টি রাখা হয়েছে। ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে পারে বলে প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের আশা। এর আগে ২০১৯ সালের ৯ মে ৪৪টি ডিম দিয়েছিল জুলিয়েট। এবারসহ জুলিয়েট ডিম দিয়েছে মোট ১৫ বার।
বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজননকেন্দ্র। বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি।
শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে লোনা পানি প্রজাতির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট, পিলপিল ও একটি পুরুষ কুমির রোমিওসহ বড় ৬টি ও ছোট ১৯৫ টি কুমির রয়েছে। কুমিরগুলো কেন্দ্রের প্যানে রেখে লালন পালন করা হচ্ছে। বংশ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিলুপ্ত প্রায় নোনা পানির এ কুমিরগুলোকে পরবর্তিতে বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন নদ নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। এই কেন্দ্র থেকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে ৯৭টি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, সকালে জুলিয়েট নিজ বাসায় ৫২টি ডিম দেয়। আমরা ডিমগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে রেখেছি। এবারের ডিমগুলো থেকে বাচ্চা পাওয়ার জন্য আমরা প্রাকৃতিক উপায়, গতানুগতিক ইনকিউবেটর ও নিজেদের তৈরি ইনকিউবেটরের সহযোগিতা নিচ্ছি। যাতে ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়া যায় সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ বিগত তিন বছর এখানে কুমিরের বাচ্চা হচ্ছে না। আশাকরি এবার একটি ভালো ফল পাব আমরা।
সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লবণ পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।’
আগামি ১৫ দিনের মধ্যে অপর মা কুমির “পিলপিল” এর ডিম পাড়ার কথা রয়েছে। প্রতি বছর প্রজনন মৌসুম মে ও জুন মাসে এ কুমির দু’টি ডিম পাড়ে। গত বছর মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ডিম দিলেও তা থেকে কোন বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়নি।