মাত্র ছ’মাস পূর্বেও আমাদের এই পৃথিবী ছিল প্রাণচঞ্চল। সবারই প্রাত্যহিক জীবন শুরু হতো ব্যস্ততাকে সঙ্গী করে। এমন জীবনে অভ্যস্ত আমরা তখন পর্যন্ত ভাবতেও পারিনি সামনের দিনগুলোতে কী হতে যাচ্ছে! কোভিড-১৯ এর আক্রমণে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ এ দুর্যোগে পুরো পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ গৃহবন্দী জীবনযাপন করছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরো দুনিয়া জুড়ে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে তা থেকে রেহাই পায়নি শিক্ষাব্যবস্থাও। শিক্ষা ব্যবস্থাপক ও শিক্ষা প্রদান কাজে যারা জড়িত বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পড়েছেন উভয় সংকটে; তাঁরা না পারছেন প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে, আবার না পারছেন শিক্ষার ধারা কার্যকরী রাখতে।
উন্নত দেশগুলোতে অনলাইন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেবলমাত্র শ্রেণীকক্ষভিত্তিক পাঠদান ব্যবস্থায় অধিকতর নির্ভরশীল হওয়ায় এই স্থবিরতা জেঁকে বসেছে প্রকটরূপে। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা চালু রাখলেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা। যেসব এলাকা এখনও পুরোপুরি বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসেনি সেখানে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা বস্তুত অসম্ভব।
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা খুলনার সর্বদক্ষিণের উপজেলা দাকোপ। ঝড় জলোচ্ছ্বাস আর প্রতিকূল পরিবেশের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেই এই উপজেলার মানুষের বসবাস। যে কারণে সারাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা সর্বাধিক। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এই প্রবণতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে করোনাকালীন শিক্ষা সংকট।
এসব বিষয়কে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ্যবইমুখী হতে উদ্বুদ্ধ করতে দাকোপ খুলনা শিক্ষা পরিবার (ডিকেএসপি) শুরু করেছে উন্মুক্ত কুইজ প্রতিযোগিতা।
এই কুইজ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হেমন্তকুমার বৈদ্য বলেন: “করোনা সংকটকালীন এই সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এটাও সত্য যে এই উদ্দেশ্যে এখন কেবল সিলেবাস শেষ করার প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের মাথায় পড়াশোনার বোঝা চাপিয়ে দিলেই চলবে না; এই সময়টিতে আমাদের উচিত হবে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নমুখী উৎসাহমূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পাঠ্যবইয়ে আগ্রহী করে তোলা। এ জন্য পাঠ্য বা রেফারেন্স বইয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি সিলেবাসের বিষয়গুলোর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কিন্তু বিকল্প ও ব্যতিক্রমী উপায়ে তাদের পড়াশোনায় যুক্ত করতে এই উদ্যোগ। এই কুইজ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত উৎসাহ ও আনন্দের সাথে পাঠ্যবইমুখী হবে। তারা উজ্জীবিত বোধ করবে।”
এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্যোক্তা অসীম ঘরামী বলেন: “ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও বইমুখী করার জন্য আমাদের প্রচেষ্ঠা। আমরা প্রতিটি পর্বের বিজয়ীকে প্রাইজমানি উপহার দিবো। একই সাথে সকল শিক্ষার্থীকে অনুরোধ করব তারা যেন করোনাসংকটে মনোবল শক্ত রাখে এবং বইয়ের পাতাকে বন্ধু ভেবে সব সময় পড়াশুনা করে। আমরা সকল শিক্ষার্থীর সুস্থতা কামনা করি।”