Image default

দুই দশক পেরিয়ে খেজুরিয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের শারোদোৎসব (ভিডিও)

মৃদুল বর্মণ : দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা ইউনিয়নের খেজুরিয়া গ্রামের বীণাপাণি স্কুল সংলগ্ন মন্দিরে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারেও পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও মহামারি করোনার কারণে ছিলনা কোনো জাকজমকপূর্ণ আয়োজন। তারপরেও স্থানীয় পুণ্যার্থী আর দর্শনার্থীদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে খেজুরিয়া গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঢাংমারী ও ভোজনখালী গ্রামের শত শত দর্শনার্থী এসেছেন এই মন্দিরের পূজা দেখতে। মহা অষ্টমীতে মায়ের অঞ্জলি প্রদান করেন মন্দির সম্মুখস্থ বৃষ্টিভেজা মাঠে বসেই।
একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অন্যদিকে করোনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এই দুই বিপত্তিকে মোকাবেলা করে নির্বিঘ্নে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করাই ছিল আয়োজকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির বর্তমান সেক্রেটারি স্বপন কুমার কবিরাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এবছর পূজা আয়োজনে সরকারি তরফ থেকে অনেক বিধিনিষেধ ছিল। সেসব বিধি মেনেই আমরা পূজা আয়োজন করেছি। সবাই যাতে নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখেন এবং মাস্ক পরিধান করে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করেন সে বিষয়টি আমরা বিশেষভাবে প্রচার করেছি।

অন্যদিকে এই পূজার খরচের বৃহৎ অংশটি আসে আয়োজক এবং স্থানীয় অধিবাসীদের ব্যক্তিগত অনুদান থেকে। কিন্তু দীর্ঘদিন করোনার কারণে এই অনুদান প্রদানকারীদের অনেকেই কর্মহীন ছিলেন। যার ফলে তারা আশানুরূপ অর্থিক অনুদান প্রদান করতে পারেন নি। মন্দিরটি খেজুরিয়া গ্রামে হলেও আয়োজকদের অন্যতম একটি অংশ পার্শ্ববর্তী ঢাংমারী গ্রামের বাসিন্দা। এই দুই গ্রামের আয়োজকদের মধ্যে অনেকেই বনজীবী। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনে মৎস্য আহরণের পাস-পারমিট বন্ধ থাকায় তাদের অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। যার ফলে এবছর অনুদান সংগ্রহের পরিমান ছিল অনেক কম। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর সরকারি অনুদানের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত পূজার অনুদান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অনুদানসহ বেশকিছু সরকারি অনুদান আমরা পেয়েছি। যার ফলে সুষ্ঠুভাবেই পূজা সম্পন্ন করা গেছে।”

তিনি আরও বলেন “প্রতিবছর পূজা উপলক্ষে আমরা যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। তাছাড়া পূজার সময় প্রতিদিন সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতায় স্থানীয় ভক্তরা অংশ গ্রহণ করতেন । কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এবছর সেসব আয়োজন বাদ দিতে হয়েছে।”

মন্দির কমিটির সভাপতি সমাজসেবক সুরঞ্জন রায় বলেন, “একেবারে সল্প পরিসরে আজ থেকে একুশ বছর আগে আমরা এখানে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু করি। সে সময় আমাদের সামর্থ্য এতটাই সীমিত ছিল যে প্রথম বছর প্রতিমা গড়ার ভাস্কর এসে প্রতিমা গড়তে অনিচ্ছা প্রকাশ করে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আমরা পিছু হটিনি। খেজুরিয়া এবং ঢাংমারী গ্রামের সর্বস্তরের মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।

পূজার শুরু ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখানে দুর্গাপূজার আয়োজনের কথা সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেছিলেন খেজুরিয়া নিবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সমাজসেবক বানীশান্তা পিনাকপানি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বাবু কৃষ্ণকান্ত মন্ডল। আজ থেকে দুই দশক আগে এই বীণাপাণি স্কুলের মাঠে সর্বপ্রথম নাম যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। সেই যজ্ঞ মঞ্চে দধিভঙ্গে তিনি উপস্থিত থেকে দুর্গাপূজা আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। প্রতিবছর পূজা আয়োজনের সময় তাকে আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি। “

প্রয়াত শিক্ষক কৃষ্ণকান্ত মন্ডল

সভাপতি সুরঞ্জন রায় বর্তমান মন্দিরের সংস্কারের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন “এখানে সামান্য কিছু সরকারি অনুদানসহ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই মন্দিরের যতটা সম্ভব উন্নয়ন করেছি। সিডর, আইলা, আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মন্দির মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার একটু নজর দিলে মন্দিরটি সুন্দর করে পরিপাটি করা যেতো। সুন্দর করতে পারলে এই মন্দির হয়ে উঠতো আরও দর্শনার্থীর পুণ্যস্থল।”

আরও পড়ুন

না ফেরার দেশে সমাজসেবক শিবপদ পোদ্দার

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপে হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম না মানায় জরিমানা

দাকোপ প্রতিদিন

দিপায়ন দ্বীপের ছোট্ট কবিতায় মর্মস্পর্শী জীবনের গল্প

দাকোপ প্রতিদিন

সৌমেনের ঋণ শোধ করতে পারবো না, একটা টাকাও সে নিল না গাড়িভাড়ার

দাকোপ প্রতিদিন

এবার দাকোপে নারায়ণগঞ্জ ফেরত দুই গার্মেন্টস কর্মীর করোনা শনাক্ত

দাকোপ প্রতিদিন

ডিকেএসপির কুইজ প্রতিযোগিতা : শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইমুখী করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

দাকোপ প্রতিদিন

অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধার

দাকোপ প্রতিদিন

চালনা পৌরসভার মেয়র পদে সনত কুমার বিশ্বাসকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপে ২৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনে, খুলনা বিভাগে ১৯৮

দাকোপ প্রতিদিন