গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি (খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা), ভারত বিচিত্রার সম্পাদক এবং খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য শ্রী নান্টু রায় বলেন, ‘ধর্ম চর্চার ক্ষেত্রে আমাদের উপলক্ষ লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
ষটতিলা একাদশীর উপবাসান্তে পারণ-পূর্ব ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানে ২৯ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার ‘বৌমার গাছতলা রাধা-মাধব কেন্দ্রীয় মন্দির’-এ ভক্তদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
‘আমরা পূজা যজ্ঞ ইত্যাদির আয়োজন করি ঈশ্বরের উপাসনার জন্য, কিন্তু আমাদের অধিকাংশ সময় কেটে যায় পূজা বা যজ্ঞের উপাচার সংগ্রহে। ফলে উপাসনার সময় কমে যায়। আবার কিছুটা সময় থাকলেও পূজা বা যজ্ঞের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করে আমরা এ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার মাঠে আনন্দ-উৎসবে অতিবাহিত করি। শেষ পর্যন্ত পূজা বা উপাসনা হয়ে ওঠে শুধুমাত্র পুরোহিতের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পূজা যজ্ঞ ইত্যাদির আয়োজন করি ঈশ্বরের উপাসনার জন্য, কিন্তু আমাদের অধিকাংশ সময় কেটে যায় পূজা বা যজ্ঞের উপাচার সংগ্রহে। ফলে উপাসনার সময় কমে যায়। আবার কিছুটা সময় থাকলেও পূজা বা যজ্ঞের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করে আমরা এ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার মাঠে আনন্দ-উৎসবে অতিবাহিত করি। শেষ পর্যন্ত পূজা বা উপাসনা হয়ে ওঠে শুধুমাত্র পুরোহিতের।’
তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর এক। তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরকে নিরাকার ভাবেন না। তাদের ঈশ্বর আকার-নিরপেক্ষ। ঈশ্বর যেহেতু সর্বশক্তিমান, তাই তিনি যেমন নিরাকার হতে পারেন, তেমনি সাকারও হতে পারেন। সনাতনীরা ঈশ্বরের শক্তিমানতার প্রধান তিনটি রূপ কল্পনা করে— ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। ঈশ্বর ব্রহ্মা রূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু রূপে পালন করেন আর মহেশ্বররূপে সংহার করেন। যারা বৈষ্ণব, তারা বিষ্ণুর উপাসনা করেন; যারা শাক্ত, তারা শিবের উপাসনা করেন। কিন্তু ব্রহ্মার উপাসক খুবই কম, এককালে ব্রাহ্মরা ব্রহ্মার উপাসনা করতেন। যে-সকল মহাপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা মা-কালীর উপাসনা করতেন, তাঁদের অনুসারীরা এখন ভগবানের বিগ্রহ সরিয়ে ঐসকর মহাপুরুষের বিগ্রহ স্থাপন করে পূজার্চনা করছে। ঈশ্বর যেহেতু অবতাররূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হন, সেজন্যে সনাতনাবলম্বীরা এসকল মহাপুরুষদের অবতার বানিয়ে নানা দলে-উপদলে, নানা মত-পথে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আমরা ভক্ত না হয়ে শুধু বিভক্তই হয়েছি। দিনে দিনে আমাদের বিভক্তিটা এত প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, শাক্ত বৈষ্ণবকে দেখলে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে, সৎসঙ্গী ওড়াকান্দীকে সহ্য করতে পারে না, রামকৃষ্ণ মিশন ইসকনের নিন্দা-মন্দ করে— যা আমাদের বিলুপ্তির পথ সুগম করছে। আজ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সকল মতবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে। আমাদের একটি পরিচয় আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী। কিন্তু সেখানেও গলদ দেখা দিয়েছে। আজ পাঠ্যপুস্তকসহ সর্বত্র আমাদের ধর্মকে বলা হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। আসলে হিন্দু কোনও ধর্মের নাম নয়। সিন্ধু সভ্যতায় জাত সবাই হিন্দু। হিন্দু হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নয়।’
তিনি বর্তমান করোনা আতিমারিতে সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন থেকে সুস্থ থেকে সব বিভেদ ভুলে এক ছাতার নীচে ঐক্যবন্ধ হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চালনা পৌরসভার মেয়র ও মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী সনত কুমার বিশ্বাস, মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী দেবাশিস ঢালী, থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতী লিপিকা বৈরাগী, স্থানীয় সবুজ সঙ্ঘের কোষাধ্যক্ষ শ্রী মিহির বিশ্বাস, প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট কৃষ্ণপদ মন্ডল, দাকোপ প্রেসক্লাবের সভাপতি শিপন ভুইয়াসহ অনেক বিশিষ্টজন।