ডা: অশোক কুমার বৈদ্যের সুস্থতা কামনায় গৌতম কুমার সরদারের আবেগঘন স্টাটাস

বানীশান্তা ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তিত্ব ডা. অশোক কুমার বৈদ্য বিগত দুসপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর থেকে তিনি তার ঢাংমারী গ্রামের নিজ বাড়িতেই অবস্থান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এই অসুস্থতার খবরে এলাকার মানুষের মনে ঘোর অমানিশার মতোই ভর করেছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। সর্বস্তরের মানুষ সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করছেন তার দ্রুত সুস্থতা কামনায়।

প্রাণপ্রিয় এই ডাক্তারের সুস্থতা কামনায় আবেগঘন স্টাটাস দিয়েছেন লাউডোব বাদামতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম কুমার সরদার। তিনি আজ তার ফেসবুকে লেখেন:

“খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনের কোল ঘেষে ছোট একটি গ্রাম। নাম তার ঢাংমারী। এই গ্রামকে বুঝানোর জন্য মাঝে মাঝে গোড়া ঢাংমারী (গ্রামের দক্ষিণভাগে) এবং মধ্য ঢাংমারী বলা হয়ে থাকে। আমরা গ্রামের মধ্য ঢাংমারীর বাসিন্দা ছিলাম। গ্রাম ছেড়েছি ২০ বছর হল। ২০০১ সালে বাইরে পড়াশুনা আর সেই সুবাদে বাইরে থাকা। মায়ের মুখে শুনেছি আমি যখন ১/২ বছরে পা দিয়েছিলাম তখন আমার জীবন নাকি মরণাপন্ন ছিল। তখন গ্রামের সবাই দেখে দেখে যাচ্ছিল আর বলছিল যে আমি নাকি আর বাঁচবোনা। আর সেই মুহূর্তে গ্রামের একমাত্র শক্তিমান ডাঃ দাদু (শ্রী অশোক কুমার বৈদ্য) অনেক চেষ্টা করে যখন বুঝতে পারছিলেন তার পক্ষেও আর সম্ভব না তখন নাকি বলেছিলেন যে বৌমা (আমার মাকে) তোমার ছেলের অবস্থা ভাল না। তাই এই শেষ ইঞ্জেকশনটা দিতে বললে দেব নইলে আমি আর কিছুই করতে পারলাম না। আমার মায়ের অনুমতিতে দাদু আমার জীবনের আলো দেখালেন। আমার মতো এমন জীবন বাঁচানো কাহিনী গ্রামের পরতে পরতে। আমি যতদিন গ্রামে ছিলাম কোনদিন তাঁর দুচোখের দিকে ভালো করে দেখেনি। তাকে আমি খুব ভয় পেতাম। তাঁর কথা, চলন, বলন সব ছিল খুব স্মার্ট। কোনদিন কোন অন্যায় দেখলে কিছু না বুঝেই ঝাপ দিয়ে দিতেন। গ্রামের অনেক বিচার সালিশে তাঁর যে ভূমিকা তাতে স্থানীয় বসবাসকারী এবং বহিরাগত হিন্দু, মুসলিম সবাই তাকে খুব খুব শ্রদ্ধা করত আর এখনো করে। গ্রামের একমাত্র সমস্যা সমাধানকারী এই ডাঃ। সকাল, সন্ধ্যা ছুটে চলছেন গ্রামের এই মাথা আর ওই মাথা। কত মানুষের যে উনি ফ্রি চিকিৎসা করিয়ে চলেছেন তার ইয়ত্তা নাই। ঝড়ের রাতে কাঁচা রাস্তায় হাটু সমান কাদা ঠেলে, সুন্দরবনের হিংস্র বাঘকে উপেক্ষা করে তিনি আজও ছুটে চলেন আমাদের সেবা দিতে। মুখে কখনও দেখিনি রুগীকে কটু কথা বলতে। গ্রামের সবার চির পরিচিত আমার শ্রদ্ধেয় অশোক দাদু। সারাক্ষণ থাকেন ব্যস্ত। গ্রামের মানুষ বলেন যে বাবু আছেন বলেই আমরা সবাই এই জংগলের পাশে টিকে আছি। কতবড় বড় মনের মানুষ আর জ্ঞানী মানুষ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। একটা কথা শুনতাম যে আমি শুধু ডাক্তার নই, গ্রামের সকলের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। আমাকে ছোট দাদু আর বড়দাকে বড় দাদু বলে ডাকতেন। গ্রামের অনেক অনুষ্ঠানে তাকে যেমন দেখেছি সকল ব্যবস্থাপনায় আবার দেখেছি সকলকে সম্মিলিত করে নায়কের ভূমিকায় চিরাচরিত যাত্রাপালায়। আর এই যাত্রাপালায় বড়দার সাথে তার সখ্যতা সবচেয়ে বেশি ছিল। এখনও শুনি তাঁর গুনের প্রশংসা, বলিষ্ট কন্ঠস্বরের ভুমিকা, অনিয়মের প্রতি জোর প্রতিবাদ। ওপারে সেই সুশোভিত সুন্দরবন আর এই বনের ছায়ায় উনার বাড়ী।

হ্যাঁ, সবাই হয়ত ভাবছেন যে আমি কেন এই মানুষটির কথা এত এত করে লিখছি। বৈশ্বিক মহামারি করোনা রোগে যখন আমরা সবাই গৃহবন্ধী তখন এই মানুষটি ছুটে চলছে গ্রামের অবহেলিত, নিপীড়িত, দুঃস্থ অসহায় রুগীদের খোঁজ নিতে। মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে ছুটে চলেছেন খুলনা, ঢাকাসহ সকল ক্ষেত্রে। কিন্তু হায়, এই সহৃদয় মানুষকেও ক্ষমা করল না। তাঁকেও আঁকড়ে ধরেছে তার করাল থাবায়। আজ উনি আর উনার স্ত্রী দুজনেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। জানিনা ঈশ্বরের কি লীলা। আমরা সবাই তাঁর কাছে বাঁধা। কিন্তু মন তো বাঁধন মানেনা। মন বলছে বারবার যে কেন ঈশ্বর উনার উপর এই শাস্তি দিলেন? সারা বাংলাদেশের সকল ডাক্তার, পুলিশ এই রোগে আক্রান্ত। আমরা যারা ঘরে বসে আছি, বড় বড় কথা বলছি ডাক্তার, পুলিশদের নিয়ে আমরা কি একবারও ভেবেছি তারা কিভাবে আছে? আজ তিনি বাড়ির বাইরে বের হয়েছিলেন আমাদের মতো অসহায়দের জন্য। আর তাঁর জন্য তাদের এই অবস্থা। তাই আমি সবাইকে একটা কথা বলেছি আর বলে চলেছি যে আমরা ঘরে বসে সবচেয়ে বড় কাজটি করতে পারি। আর সেই বড় কাজটি হল সারাক্ষণ তাদের জন্য আমার মনে স্থান দেওয়া। যখনই আপনি সময় পাবেন মনকে সেই পরম পিতার নিকটে সমর্পণ করে মনপ্রাণ ভরে সেই সকল মানুষদের জন্য প্রার্থনা করুন যেন তাঁরা আমাদের মাঝে সুস্থ্, সুন্দরভাবে ফিরে আসুক। একটা কথা সত্য, যে তাঁরা বেঁচে থাকলে আমরা বেঁচে থাকতে পারব। আপনি, আমি সবাই যদি বিশ্বাস করি পরম পিতা বলে কেউ আছেন তাহলে আসুন আমাদের সকল হিংসা দূর করে তাদের জন্য প্রার্থনা করি। কেন জানি মানুষটির জন্য বারবার পরান কেঁদে উঠছে। কি করবো, কাকে বলব? আমি আমার ঢাংমারী গ্রামের হিন্দু, মুসলিম সকল স্তরের মানুষের কাছে বিনম্র শ্রদ্ধাভরে প্রার্থনা জানাই যে আসুন আমরা সকলে মিলে গ্রামের অস্তিত্ব এই মহৎ মানুষ আর তাঁর পরিবারের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকটে প্রার্থনা জানাই। আপনাদের আমাদের এই শক্তিই পারে বড়কিছু ফিরিয়ে দিতে। আর আমাদের সকলের বিশ্বাসেই তিনি আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবেন ঢাংমারী গ্রামের সেই একমাত্র সম্বল “ডাক্তার অশোক বাবু” হয়ে।”

আরও পড়ুন

ভ্যানে সন্তান প্রসব করা নারীর বাড়ি গেলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপের ঐতিহ্য চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক পূজা (ভিডিও)

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপে সমাজসেবক বিনয় কৃষ্ণ সরদারের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় টাস্কফোর্স কমিটির বিশেষসভা

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপের সর্বস্তরের মানুষের ভরসার স্থল এখন দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের রক্তযোদ্ধারা

দাকোপ প্রতিদিন

খুলনায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নারীসহ তিনজনের মৃত্যু

দাকোপ প্রতিদিন

খুলনা আইটি/হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

দাকোপ প্রতিদিন

ছবি গ্যালারি – পর্ব ২ : এসএসসি ২০২০-এ বাজুয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ

দাকোপ প্রতিদিন

খুলনা জেলার নবনির্বাচিত ৩৩ ইউপি চেয়ারম্যানের শপথ অনুষ্ঠিত

দাকোপ প্রতিদিন