স্বেচ্ছা রক্তদান। পৃথিবীতে এই একটি কাজ আছে যার দ্বারা একজনের ত্যাগে আরেকজন বাঁচার শক্তি পায়। শুধু তাই নয়, দান করা এক ব্যাগ রক্ত শুধু একজন মানুষের প্রাণই রক্ষা করেনা, একটি পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকেও রক্ষা করে। এক ব্যাগ রক্তের জন্য ছোটাছুটি করতে হয় রোগীর আত্মীয়স্বজনকে। ক্লান্ত হয়ে ফিরতে হয় অনেক সময়। কিন্তু রোগীর শরীর তো মানে না, তার রক্ত চাই। রক্তের অভাবে একসময় সবার মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। রক্তদানের এই গুরুত্বকে অনুধাবণ করে দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের সদস্যরা সব বাধা বিপত্তিকে তুচ্ছ করে রক্তদানকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সদা সর্বদা তৎপর রয়েছেন।
এই সংগঠনের তরুণরা শুধু স্বপ্ন দেখছেন না, স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। দাকোপের সুতারখালীর শামিনুর-আঁখি দম্পতি দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের অন্যতম আলোচিত মুখ। দাকোপ ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে তাদের রক্তদানের ঘটনায় অনুপ্রাণিত হচ্ছেন দাকোপের তরুণরা। এই রমজানেই খুলনা থেকে ছুটে এসে একজন মুমূর্ষু রোগীকে আঁখিমণির রক্তদানের খবর সংশ্লিষ্ট মহল ইতোমধ্যেই শুনেছেন। এই দম্পতির আজকের কাহিনীও দাকোপের তরুণদের কাছে নতুন স্বপ্ন ও অনুপ্রেরনার জন্ম দিয়েছে।
গত পরশু (১৫ জুন ২০২০) ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের সদস্যরা জানতে পারেন খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি একজন অসুস্থ রোগী, খুলনার তেরোখাদার বাসিন্দা বিউটি ঠিকাদারের (৪৮) জন্য জরুরি ভিত্তিতে এক ব্যাগ এবি+ রক্ত লাগবে। খবরটা শামিনুর-আঁখি দম্পতির কাছেও যথারীতি পৌঁছে যায়। শোনামাত্রই এই দম্পতি রক্তদানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
শামিনুর রহমানের (২৫) রক্তের গ্রুপ এবি+। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কর্মস্থল বাগেরহাট। করোনার এই মহামারীতে নিজের জীবন বাজি রেখে রক্তদান করতে ছুঁটে গেলেন বাগেরহাট থেকে খুলনায়। শামিনুর-আঁখি দিনভর রোগীর খোঁজ খবর নিতে থাকেন। বিকালে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলো- রক্ত আমরা ম্যানেজ করেছি আজ হয়ত লাগবে না। তারপরও শামিনুর খুলনাতে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন।
ঘটনা এবার ভিন্ন। শামিনুরের ফোন বেজে ওঠে। ফোনটি আঁখির নজরে আসে। দেখতে পেলেন একই নম্বর থেকে কল এসেছে। আঁখি নিশ্চিত ছিলেন হয়ত তাদের রক্ত লাগবে। সত্যিই তাই। গতকাল রাত ৮.১৪ মিনিটে রোগীর পরিবার থেকে ফোন আসে, কথায় খুবই জড়তা, শুধু বলছেন “ভাই রক্ত লাগবে, আপনি কি দিতে পারবেন?” শামিনুর তাৎক্ষণিক সম্মতি জানান এবং রাত ৯.০০টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে রক্তদান করেন।
রক্তগ্রহীতার পক্ষে সুমন হালদার মুঠোফোনে বলেন “মানবতার সেবায় দাকোপ ব্লাড ব্যাংক যেভাবে এগিয়ে এসেছে সত্যিই আমরা চিরকৃতজ্ঞ এবং চিরকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শামিনুর ভাই ও আঁখি বোনকে।”