সবেই এসএসসির গন্ডি পেরোলো দিয়া। কিন্তু তার কবিতা পড়ে কিছুটা হলেও থমকে যেতে পারে পাঠক। মনে হতে পারে বয়সের তুলনায় চিন্তা-চেতনায় একটু বেশিই এগিয়েছে সে। তার কবিতার বিষয়বস্তু নির্বাচনে পরিপক্কতার ছাপ ষ্পষ্ট। তার লেখা ‘সাহিত্য’ নামের কবিতাটি পড়ে এমনটিই মনে হয়েছে। সাহিত্যের মতো এমন একটি অতলান্ত বিষয়কে দিয়া সংজ্ঞায়িত করেছে তার আপন অনুভবে। নিজস্ব বোধ-বিচারে, সাবলীল ছন্দের ব্যঞ্জনায়।
দিয়ার কবিতার একটি লাইন এমন – “সাহিত্য হলো মনগঙ্গার তোলা জল।” তার এই তুলনার সাথে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ল “কেতকী আমার ঘড়ায় তোলা জল, প্রতিদিন তুলব, ব্যবহার করব।”
দিয়া যদি এমনি কেনো দৃষ্টিকোণ থেকে সাহিত্যকে সংজ্ঞায়িত করে থাকে তবে তার কাছ থেকে দাকোপবাসী নিকট ভবিষ্যতে অনেক প্রাজ্ঞ এবং সময়-অতিক্রান্ত লেখা উপহার পাবে সন্দেহ নেই।
কবিতাটি ইতোমধ্যে একটি অনলাইন পত্রিকার সাহিত্য বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে। দাকোপ প্রতিদিনের পাঠকদের উদ্দেশ্যে কবিতাটি প্রকাশ করা হলো।
এছাড়া সমসাময়িক বিষয়ের উপরেও নিয়মিত লেখালেখি করছে দিয়া। এমনি একটি কবিতাও থাকছে এই পর্বে।
(এক)
সাহিত্য
সাহিত্য মানে সৃষ্টি, সাহিত্য মানে ভালোবাসা
সাহিত্য মানে হৃদয়মাঝে অতৃপ্ত মনের আশা।
সাহিত্য হলো মনগঙ্গার তোলা জল,
সাহিত্যই মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার বল।
সাহিত্য মানে অপেক্ষা, অনিশ্চিত পরিণতি
সাহিত্য তেমনই হবে, যেমন তার স্রষ্টার মতি।
সাহিত্য মানে এলোমেলো ছড়ানো কিছু কথা,
তাতেই হয়তো লুকিয়ে থাকে স্রষ্টার মনের ব্যথা।
একবার তা হৃদয়ে নিলে কঠিন খুব ভোলা,
কমেডি হোক বা ট্রাজেডি, মনে লাগে দোলা।
ইংরেজি সাহিত্য সমৃদ্ধ বটে, বাংলা ঠুনকো নয়
একাকীত্বে সঙ্গ দেবে, দূর করবে ভয়।
সাহিত্য মানে মনের অজান্তে অনেক স্বপ্ন সৃষ্টি,
সাহিত্য মানে লিখতে বসা, রোদ হোক বা বৃষ্টি।
সাহিত্য মানে বেঁচে থাকা, সাহিত্য মানে ব্যক্তিত্ব,
সাহিত্যই হয়ে উঠুক আমার অস্তিত্ব।
২৯/০৫/২০২০
(দুই)
বাস্তবতা
সারাবছর যেমন তেমন, পরীক্ষা যখন আসে
শিক্ষার্থীদের চিন্তা শুরু, দিন কাটে ত্রাসে ।
দিনরাত এক করে পড়তে তখন বসে,
কি জানি এর থেকে কিছু যদি কমন আসে !
বাবা-মায়ের চিন্তা শুরু, কি জানি কি হয়;
এই দেখে শিক্ষার্থীর বেড়ে যায় ভয়।
তারপর পরীক্ষা শুরু কেটে যায় দিনগুলো,
হলের ভেতর যাই হোক, বলে পরীক্ষা হলো ভালো।
অবশেষে একদিন আসে ফলাফল,
যে যেমন পরিশ্রম করেছে, তেমন পায় ফল ।
কোনো বাড়িতে শুরু হয় মিষ্টির আনাগোনা,
কিছু শিক্ষার্থীর কপালে জোটে তিরস্কার শোনা।
ছাত্র হলে রিক্সা চালাও, ছাত্রী হলে বিয়ে!
বাবা-মা ভাবে কি হবে ফেল করা শিক্ষার্থী দিয়ে?
ব্যর্থতা সইতে না পেরে অনেকে করে আত্মহত্যা,
শোকে কাতর বাবা-মা তখন করে অনুশোচনা।
জীবনটা আমরা সাজাতে চাই ছোট ছোট ফুলে,
স্বপ্নগুলো ভেঙে যায় সামান্য কিছু ভুলে।
শুধু একটি সার্টিফিকেট কখনো কি জীবনের মূল্য নির্ধারণ করে?
আগে ভালো মানুষ হোক, ভালো শিক্ষার্থী পরে।
কি লাভ পড়াশোনা শিখে ভালো চাকরি করে?
যদি বৃদ্ধ মা-বাবাকে বোঝা মনে করে।
কোটিপতির বাবা-মা আজ বৃদ্ধাশ্রমে থাকে,
ভালো মানুষ গরীব হলেও নিজ বাড়িতে রাখে।
প্রত্যেক বাবা-মা আজ এই কথা নিন মনে,
সার্টিফিকেটধারী অমানুষের চেয়ে
সার্টিফিকেটহীন আদর্শ মানুষ উত্তম শতগুণে ।
০২/০৬/২০২০
নামঃ জেমিমা সাহা দিয়া, পিতাঃ নোয়েল রানা সাহা, মাতাঃ ডরোথী পাটোয়ারী। জন্মঃ ২২/০৯/২০০৪, এসএসসিঃ ২০২০, প্রতিষ্ঠানঃ বাজুয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, উপজেলাঃ দাকোপ, জেলাঃ খুলনা।