শতাব্দীর পর শতাব্দী মহামারী ফিরে ফিরে এসেছে একশো বছরের ব্যবধানে

অনুকা রপ্তান: ব্যবধান ১০০ বছর। কাকতালীয় কিনা জানা নেই। বিশ্বে মহামারী ফিরে ফিরে এসেছে একশো বছরের ব্যবধানে। শতাব্দীর পর শতাব্দীর ২০তম বছরে সংক্রামক মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে মানব সভ্যতা। রহস্যময়ভাবে প্রতি শতাব্দীর ২০তম সাল চিহ্নিত হয়েছে মানব সভ্যতার জন্য প্রাণঘাতী বছর হিসেবে। ঠিক ১০০ বছর পরপর প্লেগ, কলেরা, ফ্লু কিংবা করোনার মত ভয়াল সব অনুজীবের আক্রমণে ‘জনশূন্য’ হয়েছে বহু জনপদ।  গত চার শতকে বিশ্ব দেখেছে মহামারী কাকে বলে। ভেদাভেদ করেনি গরিব বড়লোকের- প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের তথাকথিত বিভাজন সাময়িকভাবে লুটিয়ে পড়েছে লাশের সঙ্গে।

সালটা ১৭২০। ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিউবনিক প্লেগ। মার্সেইল থেকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এই মহামারী। দেওয়া হয় ‌’গ্রেট প্লেগ অফ মার্সেইল’। কয়েক কোটি মানুষ আক্রান্ত হন এই রোগে। তিন বছর ধরে সমগ্র ইউরোপের পাশাপশি আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু অংশে তান্ডব চালিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় এই মরণব্যাধি। একে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ পাওয়া যায় গণকবরের।

এর ঠিক একশ বছর পর ১৮২০ বিউবনিক প্লেগের স্তৃতি উসকে এবার কলেরা আকার নেয় ভয়াবহ মহামারীর। গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয় ৪ কোটি মানুষের। প্রতিদিন রীতিমত উদ্বেগজনক ভাবে বাড়তে শুরু করেছিল আক্রান্তের সংখ্যা। মূলত মৃত্যুমিছিল চলেছিল চীন, রাশিয়া, ভারতে। মৃত্যুর কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়েছিল ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে।

১৯২০ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছিল মানুষ-মহামারী যুদ্ধ। এবার থাবা বসাল স্প্যানিস ফ্লু। ধ্বংসলীলায় আগের সব ব্যাধিকে ছাড়িয়ে যাওয়া সর্বগ্রাসী স্প্যানিস ফ্লু ১৯১৮ সালে প্রথম অস্তিত্ব জানান দিলেও ১৯২০ সালে ছড়িয়ে পড়ে নানা অঞ্চলে।  দু বছরে মৃত্যু হয়েছিল ৪ কোটি মানুষের। যদিও হু বলছে সেই সংখ্যাটা আসলে ছিল ৫ কোটি। কারণ ভারতবর্ষে যে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেটি প্রথম রেকর্ডে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। মূলত ২০-৪০ বছর বয়সী মানুষের ওপর থাবা বসিয়েছিল স্প্যানিস ফ্লু। এমনকি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলিও এর থেকে রেহাই পায়নি। মৃত্যের সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল, ট্রলিতে লাশ বোঝাই করে শহর থেকে সরাতে হতো।

আজ সালটা ২০২০। ঠিক ১০০ বছর পর একবিংশ শতাব্দীতে এই চক্রের সর্বশেষ সংযোজন নতুন মহামারী করোনাভাইরাস।  চিনের উহান প্রদেশ থেকে যাত্রা শুরু করে করোনা সংক্রমণ ঘটিয়েছে বিশ্বজড়ে। এখন পর্যন্ত করোনার আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে তের হাজারেরও বেশি মানুষ (২২ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত)। বহু উন্নত দেশের আধুনিক নগরীকে জনশূন্য করেছে করোনা। বিশ্বের বহু দেশ করোনাকে মহামারী ঘোষণা করে জারি করেছে জরুরী অবস্থা। মৃত্যুর সংখ্যাটা প্রতিদিন ঊর্ধ্বমুখী। কেউ জানে না কথায় থামবে মৃত্যু মিছিল। তবু আশায় ভর করেই বাঁচা। এই মহামারী বাকিগুলোর মতো হয়তো ততখানি ভয়াবহ হবে না- মনকে সাহস যোগানো এভাবে। সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে একটাই  মন্ত্রে বাঁচা- মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য।

আরও পড়ুন

সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়ে মারা গেলেন করোনায় আক্রান্ত মা

দাকোপ প্রতিদিন

না ফেরার দেশে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত

দাকোপ প্রতিদিন

দুই শতকের দুই মহামারীকে পরাস্ত করলেন ইতালীয় শতবর্ষী

দাকোপ প্রতিদিন

লেখালেখিতে দাকোপের নতুন মুখ জেমিমা সাহা দিয়া

দাকোপ প্রতিদিন

আম্পানে বুলবুলের তুলনায় তিনগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি সুন্দরবনে

দাকোপ প্রতিদিন

করোনা রোগীকে ঘৃণা নয়

দাকোপ প্রতিদিন

চলে গেলেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর

দাকোপ প্রতিদিন

কন্যা ইরামের প্রথম ছবি পোস্ট করলেন সাকিব

দাকোপ প্রতিদিন

শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ছয় কিশোরকে উদ্ধার করল পুলিশ

দাকোপ প্রতিদিন