বৃষ্টি আসবেই
আকাশ জুড়ে কালো মেঘ, ভেসে যাচ্ছে
অজানার পথে–
সাদা বক উড়ছে মেঘের কোলে,
পাখিরা ফিরছে নীড়ে,
মাঝিরা নৌকার গুন টেনে ভিঁড়ছে কূলে,
বৃষ্টি আজ আসবেই আসবে।
ভ্যাপসা গরমে দর দর ঘাম
ঝরছে কৃষকের,
লেজ লম্বা কুকুরটা জল খাচ্ছে নদীর কূলে।
দাঁড়কাক কা কা শব্দে
বার বার নামছে নর্দমায়,
পথিক ছুটে চলেছে মাথায় পোটলা নিয়ে,
বুড়ো বটগাছটা দাঁড়িয়ে আছে নিরবে।
বৃষ্টি আজ আসবেই আসবে।
জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে দেখছি আমি অপলকে—
দুরে অনেক দুরে!
যে পথে তুমি আসবে বৃষ্টি হয়ে।
বৃষ্টি আসার শব্দে চাতক পাখি উড়ছে এলোমেলো,
গৃহবধু মেটে কলস সাজিয়েছে কলাগাছের
খোলে ঘরের দুয়ারে।
বৃষ্টি এবার আসবেই।
কিন্তু বৃষ্টি এলো না?
প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় বৃষ্টি যেন উড়ে গেলো!
মাছরাঙা পাখি ঘরে ফিরে গেলো।
হলুদিয়া পাখির নাচন থেমে গেলো।
বৃষ্টি আসলো তবে আকাশ বেয়ে নয়,
বৃষ্টি আসলো অবশেষে চোখের কোন বেয়ে।
ভাঙা বেঞ্চ
আচ্ছা, হিমাঙ্গীনি তোমার কি মনে পড়ে
সেই ভাঙা বেঞ্চটার কথা?
যে বেঞ্চিতে আমরা পাশাপাশি বসে চা খেতে
খেতে জীবনের গল্প বলতাম।
কথার ঝুড়িতে ক্রমশঃ তোমার গরম চায়ের
কাপ ঠান্ডা হয়ে যেতো?
ভেবে দেখো, হিমাঙ্গীনি?
কত কথাই না আমরা বলতাম!
আমাদের সুখ দুঃখগুলোকে ভাগাভাগি করে নিতাম।
কখনও তোমার ঝাপসা চোখের জল আমার
পকেটের রুমাল দিয়ে মুছে দিতাম।
জানো, হিমাঙ্গীনি
আমরা যে বেঞ্চটিতে বসতাম
সেটা এখনও আছে।
ঘুনে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বেঞ্চটাকে।
দুটি পায়া ভেঙে পড়ে আছে চায়ের দোকানের সামনে–
যেখানে আমরা বসতাম প্রতিদিন।
যেখানে বসে—
তোমাকে আমি, আমার প্রথম ভালবাসা
নিবেদন করেছিলাম।
কাঁপা কাঁপা হাতে ধরেছিলাম তোমার হাত।
স্বপ্ন সাজিয়ে ছিলাম জীবনের—
পাশাপাশি থাকার।
জানো, হিমাঙ্গীনি
বেঞ্চটাতে এখন আর কেউ বসে না—
বসার উপায়ও হয়তো নেই।
ভাঙা বেঞ্চটাও আমার মতো মুখ থুবড়ে পড়েছে
আমার মতো বেঞ্চটাও আশা করছে দুটি পায়ের
যার উপরে ভর করে আবার
উঠে দাঁড়ানো যায়।
যদি তুমি কখনও সময় পাও তবে এসো হিমাঙ্গীনি
ভাঙা বেঞ্চটার কাছে।
সমীরন রায়। জন্ম ১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ খ্রি., খুলনা জেলার দাকোপ থানার কৈলাশগঞ্জ গ্রামে। শৈশব কেটেছে সুন্দরবন সংলগ্ন ঢাংমারী নামক গ্রামে। স্কুল জীবন শুরু সরকারি বিশ্বনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর মাধ্যমিক স্কুলের লেখাপড়া শুরু হয় কৈলাশগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করার পর এইচএসসি দাকোপ থানার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ বাজুয়া এস এন মহাবিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা থেকে বিএ অনার্স এবং এমএ ইংরেজি সাহিত্যে। বিএড বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছোট বেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তার প্রবল আগ্রহ। নাটক, যাত্রাপালা লেখাসহ অসংখ্য বার অভিনয়ের মঞ্চে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে বাণিশান্তা পিনাকপাণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাকোপ, খুলনাতে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখি করতে করতে কবিতার জগতে আত্মপ্রকাশ।