করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দাকোপের বেশ কয়েকজন তরুণ। তারা দুর্যোগ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অনেকটা দ্রুততার সাথে নিজেরা নিজেদের মতো করে সংগঠিত হয়ে মাঠে নেমেছেন। মূলত এই উদ্যোক্তাদের অনেকেই দাকোপের বাইরে থেকে এমনকি দেশের বাইরে থেকেও সংগঠনের কাজ চলমান রাখতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের মতো এমন বৈশ্বিক মহামারীর সংকটকালে তাদের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
করোনা সংকটের শুরুর দিকে আমরা সচেতন দাকোপবাসী নামে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন যে তরুণরা তাদের কার্যক্রম চলমান থাকলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে সামনের দিনগুলোতে কিভাবে কর্মসূচি চলবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তাদের অনেকেই।
এ বিষয়ে কথা হয় গ্রুপটির অন্যতম উদ্যোক্তা অসীম ঘরামীর সাথে।
প্রশ্ন: মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার চিন্তা কিভাবে আসল?
উত্তর: আমরা যখন সচেতনতার প্রচার শুরু করি তখন আমার একটা উপলব্ধি হয়েছিল কিছু মানুষ হয়ত খাবারের সংকটে পড়বে। সেই উপলব্ধি থেকে আমি অসীম ঘরামী, উজ্জ্বল বর্মন ও বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী একমত হয়ে এমন প্লান করি কিছু একটা করতে হবে। তারপর তিনজন ২৮ শে মার্চ ২০২০ প্রায় রাত তিনটা পর্যন্ত “Urgent” নামে একটি Messenger গ্রুপে নিজেরা কথা বলি। সেখানেই আমরা একমত হই যে, আমরা তিনজনে ৩০ প্যাকেট দিয়ে শুরু করব। তারপর যা হওয়ার হবে। তারপর আমাদের বড় ভাই নিউইয়র্ক থেকে দীপঙ্কর রায় ও বাংলাদেশের একটি এনজিও কর্মকর্তা জয়ন্ত রায় আমাদেরকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করেন এরপর থেকে একে একে জাপান থেকে টমাস রায় সহযোগিতা করেন। তারপর আমাদের আরেক বড় ভাই শেক্সপিয়ার রায় ফেসবুক লাইভে আমাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং তার মাধ্যমে আমাদের ফান্ড বাড়তে থাকে, একই ভাবে আরেকজন সদস্য উজ্জ্বল বর্মন ও ছোট ভাই সমিত রায় বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে যার ফলে ধীরে ধীরে আমাদের ফান্ড বাড়তে থাকে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘দাকোপ খুলনা শিক্ষা পরিবার’, ‘দ্য ভয়েস অব দাকোপ’, ‘শিশুদের জন্য আমরা’ সংগঠনের স্থানীয় তরুণেরা ওই অনলাইন ভিত্তিক গ্রুপের সঙ্গে মিলিত হয়ে সহযোগিতা করছে।
প্রশ্ন: এ পর্যন্ত ফান্ডে মোট কত টাকা এসেছে?
উত্তর : ১ লক্ষ টাকা। আমাদের ফান্ডের সমস্ত টাকা আমরা খরচ করে ফেলেছি। করোনা ক্রান্তিকালে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, মানুষকে সচেতন করতে এবং সহায়তা সামগ্রী পৌঁছে দিতে। ক্রমান্বয়ে আমরা আরও বড় পরিসরে অনেক পরিবারকে সহায়তা করার জন্য ফান্ড গঠন করার চেষ্টা করেছি। তবে সদস্যদের পক্ষে সেটি আর সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আমাদের ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে গঠন করা তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এই কার্যক্রম আস্তে আস্তে বন্ধের দিকে যাচ্ছে। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন তাহলে এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ফান্ডের অপর্যাপ্ততার বিষয়টি উঠে আসে গ্রুপটির অন্যতম সদস্য ঊজ্জ্বল বর্মণের বক্তব্যেও।
তিনি জানান, নিজেদের প্রাসঙ্গিক খরচ বাঁচিয়ে সেই অর্থ থেকে সংকটময় সময়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াই। আমরা যতদিন পেরেছি, ততদিন এ কাজ চালিয়েছি। বর্তমানে আমাদের তহবিল থেকে সহায়তা করার মতো যথেষ্ট টাকা-পয়সা নেই। ধীরে ধীরে এসব কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়ছে। যার যা আছে তা নিয়েই এই দুর্যোগকালীনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
৮ মার্চ দেশে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এর পরপরই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবং অসহায় মানুষের জন্য খাদ্যদ্রব্য জোগাড় করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ‘আমরা দাকোপবাসী’র তরুণরা। প্রথম দিকে তাঁরা জনসচেতনতা তৈরিতে মাইকিং করা, জীবাণুনাশক ছিটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেন। এরপর যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়, তখন অসহায় শ্রমজীবী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যান তাঁরা।
তারা নিজেরা তহবিল গঠন করেছেন পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বন্ধুদের সহায়তায় তিনধাপে প্রায় ৩০০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। তবে অর্থের অভাবে বর্তমানে ওই গ্রুপের তরুণেরা এ কার্যক্রম আর চালাতে পারছে না। তাঁদের মতে, এতে সমাজের বিত্তবানরা উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসলে, আবারও তহবিল গঠন করে খাদ্য সহায়তা করা যাবে।