প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সারাবিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৩টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০। এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৪৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই লাখ ৬০ হাজার ২৪৭ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট তিন লাখ ৩৭ হাজার ৩১০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৬৩৪ জনের। তবে মৃতের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৮৭। আর আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ২৮ হাজার ৯৪৮ জন।
মৃতের হিসাবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৪১। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৬।
মৃতের সংখ্যা চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৯৩ হাজার ৭৮০ জন। এর মধ্যে আট হাজার ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ইরানে মারা গেছে যথাক্রমে চার হাজার ৯৪৩ এবং তিন হাজার ৬০৩ জন।
উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩৩৩। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপনের অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) সন্দেহ প্রকাশ করবে।’
করোনা ভাইরাসের মহামারি এখনও সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছায়নি বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাত কবলিত দেশগুলোতে সংক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘ভাইরাসটি দেখিয়ে দিয়েছে কত দ্রুত তা সীমান্ত পার হতে পারে, দেশ বিধ্বস্ত করে দিয়ে জীবন কেড়ে নিতে পারে।’ করোনা মহামারি মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে আরও বেশি সহায়তা দিতে উন্নত দেশ এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
এদিকে স্বনামধন্য মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি বলেছেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে এ ব্যাপারে বিপুল তথ্য বিশ্বের কাছে ছিল। তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এই ভাইরাসের মহামারি ঠেকানো যেত। তবে মুনাফাবাজ ও দায়িত্বহীন রাজনৈতিক ও বাজার-ব্যবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২৮ মার্চ নিজ কার্যালয়ে ক্রোয়েশিয়ার দার্শনিক ও লেখক সার্কো হর্ভাটের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় করোনার চেয়েও বড় দুই বিপদ আসছে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন তিনি। এর একটি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, অপরটি সম্ভাব্য একটি পরমাণু যুদ্ধ।