“আমার ছেলের জন্য প্রতিমাসেই রক্তের প্রয়োজন হয়। কোনো মাসে এক ব্যাগ, কোনো মাসে দুই ব্যাগ। এর আগে খুলনা থেকে সংগ্রহ করেছি অনেক কষ্টে। খুলনা গিয়ে সবকিছু করতে ব্যয়ও হতো অনেক। এবার দাকোপ ব্লাড ব্যাংক আমাকে যে উপকার করেছে তা ভোলার নয়। আমার ছেলেকে যে রক্ত দিল, সৌমেন- তার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। তাকে ২০০ টাকা দিয়ে যাতায়াত ভাড়ার জন্য সাধলাম, একটা টাকাও সে নিল না গাড়ি ভাড়ার। বাড়ি থেকে চালনা আসতে ওর তো কমপক্ষে দুশো টাকা খরচ হয়েছে। ফল খেতে দিলাম তাও খেলো না।”
কথাগুলো বলছিলেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ৫ বছরের শিশু উৎসবের বাবা নিখিল বিশ্বাস। বাড়ি দাকোপের প্রত্যন্ত অঞ্চল খেজুরিয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে। ছোট্ট উৎসব দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। আজ ১১ জুন শিশুটির জন্য এক ব্যাগ o+ রক্ত দিয়েছেন দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের সদস্য সৌমেন মন্ডল। চুনকুড়ি গ্রামের ছেলে সৌমেনের এটাই প্রথম রক্তদান। আগামীকাল শিশুটির জন্য আরও এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। শিশুটির বাবার বিশ্বাস দাকোপ ব্লাড ব্যাংক তাকে আরও এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দেবে।
নিখিল বিশ্বাসের মতো দাকোপের অগণিত মানুষের আশা ভরসার ঠিকানা এখন দাকোপ ব্লাড ব্যাংক। এই সংগঠনের সদস্যরা যখনই কোনো মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজনের কথা জানতে পারছেন তখনই নিজেদের গ্রুপে আলোচনা করে দ্রুততার সাথে রক্ত সংগ্রহের যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তাদের ফেসবুক গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। নিবন্ধিত রক্তদাতার সংখ্যা দুই শতাধিক।
প্রতিদিন তাদের ফেসবুক পেজে রক্তদাতা সদস্যদের তথ্য ভেসে ওঠে। রাসেল হাওলাদার, অভিজিৎ কুমার (অভি), তুফান বিশ্বাস, শেখ হেলাল, সজল ব্রহ্মচারী, তুষার রায়, মোঃ তরিকুল ইসলাম, শেক্সপিয়ার রায়, গৌতম সরকার, হিমেল চক্রবর্তী, মামুন সরদার, এবি আসাদ, সোহাগ শিকদার, বেলাল হোসেন, শামিনুর রাহমান, আলামিন শেখ, সৌরভ গাইন, শংকর রায়, পিন্টু সাহা, মোঃ সুজন হাওলাদার, আঁখি মনি, রিংকন গাইন, নিত্যানন্দ, সুব্রত মন্ডল, অরিন্দম রায়, কল্যাণ থান্দার প্রমুখসহ আরও রক্তদাতা ও সংগঠনের সদস্যদের নামগুলো একেকটি ভরসার প্রতীক হয়ে প্রদীপ শিখার মতো আলো ছড়াতে থাকে মুমূর্ষু রক্তগ্রহীতা এবং তাদের স্বজনদের অন্তরে। একেকটা নামের সাথে মিশে থাকে রক্তগ্রহীতাদের সীমাহীন কৃতজ্ঞতা আর শঙ্কামুক্তির অপার স্বস্তির নিঃশ্বাস। এই রক্তযোদ্ধারা সবাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রক্তদানের মতো মহৎ সেবায় নিজেকে যুক্ত করেছেন। তাদের ত্যাগের মহিমা দাকোপকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেবে সন্দেহ নেই।