কবিতায় সমাজের বাস্তব চিত্র আঁকলো প্রীতম সরকার

দুদিন আগেই প্রকাশিত হলো এসএসসি রেজাল্ট। দেশের সবচেয়ে বড় এই পাবলিক পরীক্ষায় সবারই আলোচনা জিপিএ ফাইভ নিয়ে। জিপিএ ফাইভ যেন আজ জীবনের সফলতার একমাত্র মাপকাঠি। অভিভাবক, শুভানুধ্যায়ী, সকলের প্রত্যাশা আজ এটাই। এতে করে সমাজে তৈরি হচ্ছে বৈষম্য, হীনমন্যতা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করা হলেও এখন তা অনেকটাই সার্টিফিকেট অর্জনের হাতিয়ার হয়ে গেছে। প্রথম শ্রেণি থেকেই শুরু হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা। প্রথম প্রতিযোগিতা, “ভর্তি যুদ্ধ”। এর পরই প্রতিযোগিতায় নামতে হয় কে কত বেশি নম্বর পেয়েছে, কার গ্রেড কত ভাল। অনেক অভিভাবক, শিক্ষার্থী ভাবে জিপিএ ফাইভ ভবিষ্যতের টার্নিং পয়েন্ট। অভিভাবকরা সন্তানকে পড়ালেখার প্রতি এতো বেশী চাপ দেন যে অনেক সময় খেতেও সময় পায়না তাদের সন্তানটি। ভোর থেকে কোচিং, প্রাইভেট আর স্কুল শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্ত দেহ নিয়ে আবার ভাল রেজাল্ট করার তাগিদে বই নিয়ে পড়তে বসা। অনেকটা যেন গাধার পিঠে বোঝা চাপিয়ে দেয়া আর গাধা নির্বাক, অসহায়ের মত সে বোঝা টানা।

আমরা কী একবার ও সন্তানের কথা ভাবছি? আমরা চাই আমাদের সন্তান জিপিএ ফাইভ পাক, আমরা কত জন চেয়েছি আমাদের সন্তানটা ভাল মানুষ হোক? যে বয়সে শিশু আনন্দে বেড়ে উঠার কথা; সে বয়সেই পড়ার চাপে ভর করে যেন জীবন যায় যায় অবস্থা।

এরপর যখন পরীক্ষার রেজাল্টের ক্ষণ ঘনিয়ে আসে, শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানার জন্য উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। তাদের মনে ভয় কাজ করে, রেজাল্ট খারাপ হলে বাবা-মা বকবে। অনেক অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গী এমন- সন্তানের রেজাল্টের উপর নাকি তাদের পরিবারের সম্মান নির্ভর করে! এভাবে যে কত অভিভাবক একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাঠ তৈরি করছে। প্রতিযোগী হিসেবে মাঠে নামাচ্ছে সন্তানদের। কেন সন্তান জিপিএ ফাইভ পেলো না এ নিয়ে যেন সন্তানকে প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ঘটছে আত্মহত্যার মতো ঘটনা।

এ রোগের মূল কারণটা কিন্তু আমরাই। আমরা যারা এ পর্যায়টা পার হয়ে এসেছি তাঁরা নিজেদের খুব বিদ্বান মনে করে থাকি। দাম্ভিকতার মারপ্যাঁচে আমরা ছোট করে দেখি অন্যের বিফলতাকে। আসলে আমরা সকলেই সফলতার চাদরে মুখ লুকাতে চাই। আমরা ভুলেই যাই, “ব্যার্থতাই সফলতার চাবিকাঠি”। আমরা শিশুদের শিক্ষা দেই শুধু সফল হতেই হবে; আসলে যে ব্যার্থ হয়নি সে সফল হবে কী করে? সে বিদ্যাটা কখনোই শেখাতে চেষ্টা করি না। আজ সার্টিফিকেট অর্জনের জন্যই সন্তানদের স্কুলে পাঠান অভিভাবকরা। তারা ভুলে যান সন্তান যদি ভাল মানুষ না হয় তবে ভাল সার্টিফিকেট দিয়ে কী হবে?

দায়টা আমাদের বর্তমান সমাজেরও। সমাজ ভাল ফল চায়, ভাল মানুষ চায় না। যারা শিক্ষার্থীর ফলাফল নিয়ে কটুক্তি করে, নেতিবাচক মন্তব্য করে, ঠাট্টা, মশকরা করে, যারা সার্টিফিকেট আর জিপিএ ফাইভ দিয়ে যোগ্যতার মূল্যায়ন করে তাদের কারণে আজ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে পিছিয়ে পেড়েছে শিক্ষার্থীরা।

প্রীতম সরকার কবিতার ছন্দে এমনি একটি সমাজ বাস্তবতার চিত্র এঁকে সতর্ক করল আমাদের অভিভাবকদের যারা আমরা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ভুলতে বসেছি।

খোকার রেজাল্ট
প্রীতম সরকার

এ বছরই দিল খোকা এসএসসি এক্সাম,
চারিদিকে খোকার আবার বিশাল সুনাম।

এইতো সেদিন রেজাল্ট দিলো খোকা পেয়েছে ‘এ‘,
পাশের বাসার ভাবির মেয়ে গোল্ডেন পেয়েছে।

তাইনা শুনে বাড়ির সবাই খোকাকে দেয় জ্ঞান,
সব বিষয়ে প্রাইভেট নিয়েও প্লাস পায়না ক্যান?

লেখা-পড়া বাদ দিয়ে তুমি কর কুলিগিরি কাজ,
তোমার জন্য বাড়ির দরজা বন্ধ হলো আজ।

অনেক কষ্টে ঘরে গেল খোকা ব্যথা নিয়ে মনে,
হৃদয় আকাশে মেঘ জমলো দূরের ইশান কোনে।

হৃদয ভিজলো কষ্টের ঘামে বালিশ চোখের জলে,
মা-বাবা তো আপন মানুষ যদি এমন কথা বলে।

এমনি করে দিন চলে গেল রাত্রি এলো চোখে,
এখন থেকে বাইরে গেলে কি বলবে সব লোকে।

পরদিন চলে গেলো খোকা এই দুনিয়া ছেড়ে,
জিপিএ ফাইভ কত খোকার প্রাণ নেবে বলো কেড়ে।

প্রীতম সরকার, পিতা: সুধাংশু সরকার, মাতা: দিপীকা সরকার, জন্ম তারিখ: ২১/০১/২০০৩। শিক্ষা: কালিকাবাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা এবং লাউডোব বাদামতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা। গ্রাম : হরিনটানা, ইউনিয়ন : লাউডোব, ডাকঘর :বাজুয়া, উপজেলা: দাকোপ, জেলা: খুলনা।

আরও পড়ুন

দাকোপে চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন যারা

দাকোপ প্রতিদিন

করমজলে ৪৪টি ডিম পেড়েছে কুমির পিলপিল

দাকোপ প্রতিদিন

সৌমেনের ঋণ শোধ করতে পারবো না, একটা টাকাও সে নিল না গাড়িভাড়ার

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপে করোনা সন্দেহে ১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ

দাকোপ প্রতিদিন

এবার দাকোপে নারায়ণগঞ্জ ফেরত দুই গার্মেন্টস কর্মীর করোনা শনাক্ত

দাকোপ প্রতিদিন

সাক্ষাৎকারে অসীম ঘরামী ও ঊজ্জ্বল বর্মণ : পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে ‘আমরা দাকোপবাসী’র তরুণদের সেবাকার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা, বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান

দাকোপ প্রতিদিন

ডা: অশোক কুমার বৈদ্যের সুস্থতা কামনায় গৌতম কুমার সরদারের আবেগঘন স্টাটাস

দাকোপ প্রতিদিন

সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ (এসএসসি ২০২০) – ছবি গ্যালারি – পর্ব ১২

দাকোপ প্রতিদিন

বাজুয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা (ভিডিও)

দাকোপ প্রতিদিন