গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে কেমন ছিল বাজুয়া স্কুলের লেখাপড়া : বৈদ্যনাথ গাইনের স্মৃতিকথা

যে স্কুলটিকে আজ আমরা বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় নামে চিনি সাম্প্রতিক সময়ে সেই স্কুলটি শতবর্ষে পদার্পণ করল। একটা স্কুলের জন্য এই পর্যায়টি একটি গৌরবোজ্জ্বল মাইলফলক। বিগত শতাব্দীতে স্কুল প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নেই এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন দাকোপ থানার বানীশান্তা ইউনিয়নের সমাজ-দার্শনিক বৈদ্যনাথ গাইন। বৈদ্যনাথ গাইন ছিলেন সমসাময়িক কালের অত্যন্ত ক্ষুরধার সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন তৎকালীন বৃটিশ বিরোধী ভারতছাড় আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তেভাগা আন্দোলনসহ সেই সময়ের প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোতে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন তিনি ভারতের শরণার্থী শিবিরে দুর্গত মানুষের পাশে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর আত্মনিয়োগ করেছিলেন ফেরত আসা স্থানীয় শরণার্থীদের ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্নিমাণে।

পঁচাত্তর পরবর্তী ক্রান্তিকালে তিনি দাকোপ থানা আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। এক পর্যায়ে ছিলেন দাকোপ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জীবনের নানান ঘাত প্রতিঘাত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজীবন তিনি গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৮ খিস্টাব্দে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি তার আত্মজীবনীতে আলোকপাত করেছেন সমসাময়িক কালের সমাজচিত্রের নানান দিক।

তার সেই আত্মজীবনী থেকে তার শিক্ষাজীবনের একটি পর্বের বিবরণীতে উঠে এসেছে বর্তমান বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাপরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র।

গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে কেমন ছিল বাজুয়া স্কুলের লেখাপড়া
বৈদ্যনাথ গাইন

আমি নির্ধারিত সময়ে লেখা পড়ার সুযোগ পায়নি। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হলাম তখন আমার বয়স ১০ বছর। অবশ্য এজন্য আমাকে লজ্জা পেতে হয়নি। যেহেতু তৎকালীন সময় প্রতিটা পরিবারের ছেলেমেয়েদের ধাঁচই ছিল নির্ধারিত সময়ের ব্যতিক্রম। আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় ছেলেরা আমার শ্রেণীতে লেখাপড়া করতো। দাদার কঠোর নিয়ন্ত্রণাধীনে থেকে আমার লেখাপড়া শুরু হয়। স্নেহ যত্ন ভালোবাসা ও কঠোর শাসনে আমাকে লেখাপড়া করাতেন। আমি কোন সময় বিদ্রোহ করার সুযোগ পায় নি। গাছে গাছে টিয়া পাখি ও শালিকের বাচ্চা ধরা, মাঠে মাঠে ঘুড়ি উড়ানো, খালে বিলে জলে মাতামাতি, প্রতিবেশীর বাড়ি গোপনে পেয়ারা, শশা খাওয়া ছিল যার অভ্যাস, আজ সে দাদার স্কুলের ছাত্র।

দুই বছরের মধ্যে আমি দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক সমাপ্ত করে বাৎসরিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রমোশন পাই। উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় ত্যাগ করে যেতে হবে। যেতে হবে এম ই স্কুলে, যার মান ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত, অথবা হাইস্কুলে। অধুনা কালের মত তৎকালীন সময়ে এত স্কুল পাঠশালা ছিল না। যা কিছু ছিল তা দাকোপের পল্লী অঞ্চলে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের যোগাযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় ছিল না। তৎকালীন সময়ে দাকোপ থানার একটি হাই স্কুল ছিল বাজুয়ায়,  দাকোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা, রামপাল ও বটিয়াঘাটা থানার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু ছাত্র এই বাজুয়া হাইস্কুলে লেখাপড়া করতো। স্কুলে দূরাগত ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস ছিল। আমাকেও বাজুয়া স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো।

আমি বাজুয়া স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হলাম। স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি হইতে দশম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়া করতো। আমার খেজুরিয়া গ্রামের অনেক ছেলেরা ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করতো, কিন্তু আমি তাদের চিনতাম না, চিনতাম না অন্যান্য ছাত্রদের, চিনতাম না শিক্ষক মহাশয়দের। সম্পূর্ণ অচেনা অজানা পরিবেশে আমাকে প্রথমের দিকে কয়েক দিন কাটাতে হয়েছিল। অনভ্যস্থ কাজও করতে হয়েছিল যেমন জামাকাপড় বালিশ বিছানা পরিষ্কার করা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এই অশুভ পরিবেশ ও পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমার সময় লাগে নি। গ্রামের ছেলেদের সাথে পরিচয় হলো। অনেকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলাম, হয়ে উঠলাম তাদের অত্যন্ত প্রিয় ও স্নেহের পাত্র। পরিচয় হল ছাত্রাবাসে অবস্থানরত অন্যান্য অঞ্চলের ছাত্রদের সাথে।

স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা ছিল ১৫ জন। অধিকাংশ শিক্ষক কায়স্থ, ব্রাহ্মণ, দাস, পাল ও বৈশ্য সম্প্রদায়। এই সকল শিক্ষক মহাশয়েরা সর্বগুণসম্পন্ন; শিক্ষকতার পাশাপাশি খেলাধুলা, গান-বাজনা, প্রজ্ঞা-রাজনীতি ও আধ্যাত্মিকতার জীয়ন্ত প্রতীক স্বরূপ। তাদের জীবন চরিত্রের চলার পথে আমি যা পেয়েছিলাম অধুনা কালের অধিকাংশ শিক্ষকের মধ্যে তা দেখা যায় না। শিক্ষক মহাশয়দের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল এবং আমি তাদের প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম স্বল্পকালের মধ্যে। এত অল্প সময়ের মধ্যে আমি শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে উঠবো এটা আমি কল্পনা করতে পারিনি। আমি শিক্ষক মহাশয়দের সামনে সাহস করে যেতাম না, কিন্তু শিক্ষক মহাশয়রা আমাকে দেখলেই ডাকতেন, বলতেন কাছে এসো, আমাদের কাছে আসতে ভয় ও লজ্জা ত্যাগ করো। তোমার মা-বাবা বাড়িতে, এখানে তোমার সবকিছু দেখাশোনা করবো আমরা শিক্ষক মহাশয়েরা। অসুবিধা হলে বলবে, মনে থাকবে তো? এমনি করে সকলেই বলতেন।

ছাত্রাবাসের সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন বাবু বটকৃষ্ণ পাল এমএবিটি। ছাত্রাবাসে সঠিক ছাত্র সংখ্যা মনে নাই, তবে আড়াই শতাধিক হবে। বটবাবু ছাত্রাবাসের ছাত্রদের সার্বিক উন্নতি সাধন করাই ছিল তার চিন্তা-চেতনা ও স্বপ্ন। তাই তিনি অতি কঠোর নিয়ম কানুনের মাধ্যমে ছাত্রাবাস পরিচালনা করতেন। নির্ধারিত সময়ে শয্যাত্যাগ, ভোর ৪:৩০ থেকে ভোর ৫টায় প্রভাত প্রার্থনা, ৫:৩০ ঘটিকায় প্যারেড, ৬টায় প্যারেড রেস আধা মাইল দৌঁড়ানো, ৬:৩০ এ ছুটি। ৭টায় বাল্যভোজন, ৭:৩০ পড়াশুনা, ৯ টায় স্নানের ঘন্টা, ১০টায় খাওয়া, ১১টায় স্কুল, ৪টায় খেলাধুলা, ৬টায় সন্ধ্যা প্রার্থনা, ৭টায় পড়াশুনা, ১০টায় নৈশভোজন ১০:৩০ বিরতি, ১১টায় পড়াশুনা, ১২টায় ঘুমানো। সমবেত প্রার্থনা করতাম গীতার শ্লোক। ত্বমাদি দেব পুরুষ পুরান তমস্য বিশ্বস্য পরমং নিধানম। গীতার সেই প্রার্থনা শ্লোক।

আমরা পঞ্চম শ্রেণীতে ১৮০জন ছাত্র পড়াশোনা করতাম। ছেলেদের মধ্যে ক্লাসে বসা নিয়ে আন্দোলন শুরু হলো। যে সকল ছেলেরা পুরা বেতন দিবে তারা সামনের বেঞ্চে বসবে।

আমরা পঞ্চম শ্রেণীতে ১৮০জন ছাত্র পড়াশোনা করতাম। ছেলেদের মধ্যে ক্লাসে বসা নিয়ে আন্দোলন শুরু হলো। যে সকল ছেলেরা পুরা বেতন দিবে তারা সামনের বেঞ্চে বসবে। যারা অর্ধেক তারা পরের বেঞ্চে বসবে, যারা মোটেই দেবে না তারা সকলের পিছনে। এই নিয়ে আন্দোলন। স্বাভাবিক অবস্থায় আমি প্রথম বেঞ্চের ছাত্র। যেহেতু আমার বাবা ছিলেন ধনী, টাকার অভাব ছিল না। কিন্তু আমার মনটা যেন স্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্রোহ করে ওঠে এবং আমি প্রতিবাদমুখর হলাম। ভাবলাম এখানেও ধনী-গরীবের বৈষম্য। তখন প্রতিবাদের ভাষা আমার ছিল না অথচ অন্তর বিদ্রোহ করে উঠলো।

তখন কৈলাশগঞ্জ নিবাসী বাবু শশধর রায় আমাদের শিক্ষক ছিলেন। প্রথম দিকে তাকে শুধু শিক্ষক হিসেবে জানতাম। পরবর্তীতে অনেক অনেক কিছু জেনেছিলাম তার সম্বন্ধে, তিনি এই ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় তথা দাকোপের কৃতি সন্তান। তিনি ছিলেন সামাজিক ন্যায় বিচারক, দেশপ্রেমিক, বিদ্যোৎসাহী, পরোপকারী, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সুশিক্ষক। তিনিও সর্বক্ষণের জন্য আমাদের ছাত্রাবাসে থাকতেন ও ছাত্রদের পরিচালনা করতেন। আমি অতি ভয়ে ভয়ে তার নিকট ক্লাসের ঘটনাবলী প্রকাশ করলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন খুব শীঘ্রই আমি এর সমাধান করব। তুমি আমার কাছে এসো।

যথাসময় প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হলো, শেষ হলো এবং ফলাফল প্রকাশিত হয়ে গেল। শশধর বাবু ঐ ফলাফল অনুসারে ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার সিদ্ধান্ত দিলেন, তিনি নির্দেশ দিলেন যে পরীক্ষায় যারা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়ে পরপর পাস করেছে তাদের বসতে হবে বেঞ্চের শেষ নম্বর থেকে, আর যারা পাস করতে পারে নাই তাদের বসতে হবে বেঞ্চের এক নম্বর থেকে। তিনি বলতেন মানুষের পরিবেশই প্রতিভার বিকাশ, পরিবেশের অভাবে মানুষ মূঢ়ত্বে পরিণত হয়। চাই উপযুক্ত পরিবেশ। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল প্রতিযোগিতামূলক, পরীক্ষায় আমরা শতকরা ৭৫ ভাগ পাশ করে গেলাম। তৎকালীন সময় সিলেবাস ছিল অত্যন্ত কঠিন, শিক্ষকদের শিক্ষা পদ্ধতিও ছিল অনেক কঠোর, আর ছিল প্রতিযোগিতা। পরীক্ষার খাতায় একটা নম্বর পেতে হলে অত্যন্ত পড়াশোনা করতে হতো। সপ্তাহে ৫ দিন পুরো ক্লাস হতো, শনিবার বেলা ২টা পর্যন্তÑ তারপর শুরু হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান-বাজনা, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা ইত্যাদি।

আশাশুনি থানার পেজ গ্রামের নির্মলেন্দু চক্রবর্তী আমাদের শিক্ষক ছিলেন। তিনি কেবল স্কুল শিক্ষক ছিলেন না তিনি গানের শিক্ষক ছিলেন। অনেক ছাত্র ছাত্রীদের তিনি গান শেখাতেন। তিনি ছিলেন আমার প্রাইভেট শিক্ষক। আমি তার প্রিয় ছাত্র ছিলাম। আমাদের তিনি গান-বাদ্য সম্বন্ধে ধারণা দিতেন। খেলাধুলা পরিচালনা করতেন বিমলেন্দু চক্রবর্তী বিএ, ধীরেন্দ্রনাথ সেন বিএ, অনন্ত মোহন বাগচী বিএ বিএসসি, কেশব চন্দ্র সাহা এমএবিটি প্রমুখ শিক্ষক মহোদয়। স্কুলে তিনটি ফুটবল, দুইটি ভলিবল, ২ টা রিং ও ব্যাডমিন্টন, ৩ গ্রুপে ফুটবল খেলা হতো। ছাত্র-শিক্ষক বনাম ছাত্র-শিক্ষক প্রতিযোগিতা, আবার শিক্ষক বনাম ছাত্র প্রতিযোগিতা। আমি সি গ্রুপে সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলতাম। একবার আমরা বাজুয়া থেকে খুলনা জেলা শহরে খেলতে গিয়েছিলাম। পরিচালনায় ছিলেন বিমলেন্দু চক্রবর্তী। বাজুয়া এ টিম বনাম খুলনা টাউন ক্লাব, বাজুয়া বি টিম বনাম খুলনা মডেল হাই স্কুল, বাজুয়া সি টিম বনাম বটিয়াঘাটা হাই স্কুল। আমরা বিশেষ কৃতিত্বের সাথে জয়ী হয়ে পুরস্কার নিয়ে এসেছিলাম। তারপর বিভিন্ন মাঠে অনেক খেলেছি।

আমাদের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন দেবীপ্রসাদ সাধুখা বিএ অনার্স। তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব, সব সময় গেরুয়া বসন ব্যবহার করতেন। তিনি তার নির্ধারিত ক্লাস শেষ করে ঈশ্বর ও ভগবানের কথা বিভিন্ন মুনিীঋষিদের কথা বলে আধ্যাত্মিকতার প্রেরণা দিতেন।

বর্ণহিন্দুরা এদরকে নিচু জাত হিসেবে ব্যবহার করত। উন্নত মানের শিক্ষা সংস্কৃতি এমনকি কলেজ ইউনিভার্সিটিতে এই সম্প্রদায়ের কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি।

আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রাজেন্দ্র নাথ সরকার বিএ অনার্স গোল্ড মেডেলিস্ট। একদিকে সুযোগ্য শিক্ষক, হোমিওপ্যাথিক সুচিকিৎসক, অন্যদিকে ছিলেন প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক চেতনাশীল ব্যক্তি। জাতির জন্য সমাজের জন্য মাঝে মাঝে শশধর বাবু ও সেক্রেটারি বাবু সুরেন্দ্র নাথ রায়ের সহযোগিতায় রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠানিক সভার আয়োজন করতেন। এই সকল প্রাজ্ঞব্যক্তিরা ছিলেন তপশীল সম্প্রদায়ের দিকদিশারী। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মুকুন্দ মল্লিক, পতিরাম রায়, বৈজ্ঞানিক পিসি রায়, হেমচন্দ্র নস্কর প্রমুখ ব্যক্তিগণ একাধিকবার এসেছিলেন। তখন ছিল ব্রিটিশ শাসন আমল। তৎকালীন সময় বর্ণহিন্দু কায়স্থ ব্রহ্মণেরা ছিলেন ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের দক্ষিণ হস্ত। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনাকে নিয়ে খুলনা জেলা গঠিত এবং এই জেলার অধিবাসীরা শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষক। এই কৃষক সম্প্রদায় হতেই পৌন্ড্রক্ষত্রিয়, নমঃশূদ্র ও মুসলমান। বর্ণহিন্দুরা এদরকে নিচু জাত হিসেবে ব্যবহার করত। উন্নত মানের শিক্ষা সংস্কৃতি এমনকি কলেজ ইউনিভার্সিটিতে এই সম্প্রদায়ের কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। অতি কষ্টে এদের লেখাপড়া শিখতে হয়েছিল।

আগেই বলেছি যে এই তফসীল সম্প্রদায়ের শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষক। বর্ণহিন্দুদের মধ্য থেকে এক শ্রেণীর বিত্তশালী ও ধুরন্ধর ব্যক্তিরা এই কৃষক সম্প্রদায়কে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে তৎকালীন বৃটিশ সরকারের প্রতিনিধিদের হাতে হাত মিলিয়ে জমিজমা-ভূসম্পত্তি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে লিজ বন্দোবস্ত নিতেন এবং জমিদারি ও গাতিদার প্রথার প্রবর্তন করলেন। জেলার তপশীল সম্প্রদায়ের সমস্ত সম্পত্তি জমিদারদের নিকট থেকে নতুন করে বন্দোবস্ত নিতে হয়। জমিদাররা ২য় পর্যায়ে শাসক হিসেবে প্রকাশিত হয়। কৃষকদের দন্ডমুন্ডের মালিক জমিদার। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার এবং মহাজন প্রথা প্রবর্তন করে কিছু কিছু আইন প্রচলন করে যার ফলে পরবর্তীতে মহাজন ও জমিদারদের হাতে কৃষকদের ভূসম্পত্তি সমুদয় কুক্ষিগত হয়। শিল্প-কলকারখানা অনুরূপভাবে আইন প্রণয়ন করা হয়। শ্রমিক ছাটাই, কৃষক উচ্ছেদ বেপরোয়াভাবে বেড়ে যায়। ওই সময় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কৃষক শ্রমিক পার্টির সংগঠন করেন। জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ঋণের দায়ে কৃষক উচ্ছেদ প্রতিহত করার লক্ষ্যে পার্লামেন্ট থেকে ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন করে বিল পাস করেন। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কৈলাশগঞ্জ নিবাসী বাবু শশধর রায় ঋণ সালিশী বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের অনেক সভায় তার বক্তৃতা শুনেছি এবং শ্রদ্ধেয় মাস্টার মহাশয়ের কাছে অনেক কিছু শুনতাম, সব কথা মনে নাই এবং সব কথাগুলো ভাষায় রূপ দিতে পারতাম না, যেহেতু তখন আমি সবেমাত্র ছাত্র। তবে বেশিরভাগ কথাগুলি অপ্রকাশিত অবস্থায় মনের চিত্রপটে ছাপ লেগেছিল। আমার জীবনে খেলাধুলা গান-বাজনা, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, রাজনীতি, সাম্যবাদ ও আধ্যাত্মিকতাবাদের যে আন্দোলন করে গেলাম এর প্রত্যেকটি ব্যাপারে প্রেরণা ও সূচনা সৃষ্টি হয়েছিল আমার ছাত্রজীবন থেকে। মাঝে মাঝে শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই শশধর বাবু হাসতে হাসতে বলতেন- তুই এত প্রশ্ন করিস তুই কি একটা নেতা হবি? আমি বলতাম হব যদি আপনার আশীর্বাদ থাকে।

তারপর পড়াশুনা করতে থাকলাম। অষ্টম শ্রেণীতে পৌঁছে গেলাম। দুর্ভাগ্যবশত মারাত্মকভাবে আমাশয় আক্রান্ত হলাম। বাৎসরিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারি নি। বিভিন্ন কারণে বাজুয়ার লেখাপড়া করার সংকল্প পরিবর্তন করে খুলনা খালিশপুর হাইস্কুলে ভর্তি হলাম।

আরও পড়ুন

বিদ্যালয় খুলতে প্রস্তুতির নির্দেশ : খুললে যা যা মানতে হবে

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপে ২৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনে, খুলনা বিভাগে ১৯৮

দাকোপ প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে লাউডোব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা

দাকোপ প্রতিদিন

রাতের আঁধারেও ছুঁটে এলেন দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের শামিনুর-আঁখি দম্পতি

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপের সর্বস্তরের মানুষের ভরসার স্থল এখন দাকোপ ব্লাড ব্যাংকের রক্তযোদ্ধারা

দাকোপ প্রতিদিন

সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত

দাকোপ প্রতিদিন

হচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী পরীক্ষা

দাকোপ প্রতিদিন

দাকোপ উপজেলায় ৭টিতে নৌকা, ২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী

দাকোপ প্রতিদিন

বানীশান্তা পিনাকপাণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীবৃন্দ (এসএসসি ২০২০) – ছবি গ্যালারি – পর্ব ১০

দাকোপ প্রতিদিন